একটা ছেলে ট্রেন ধরতে মায়ের সঙ্গে স্টেশনে যাচ্ছিল হনহনিয়ে, পিঠে স্কুলের ভারী ব্যাগ। তার সমবয়সীই আরেকটা ছেলের পিঠ ভর্তি ছিল ঘুড়ি আর
লাটাইয়ে। সে ছুটছিল একটা কাটা ঘুড়ি ধরতে একা একাই।
এই দৃশ্য আমি দেখিনি, পিয়ালী
দেখেছে। পিয়ালী বেশ দেখতে পায়। দেখার চোখ তো সবার থাকে না। পাশাপাশি দুটো দৃশ্য
ওকে বিস্মিত করেছে। আসলে বিস্মিত হতে পারলে সাদা-কালো অথবা রঙিন সব দৃশ্য দেখা
যায়। টিভি, ইন্টারনেট দেখতে দেখতে বিস্ময় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের।
তাই দেখতে পাইনা আমরা।
আর আমি দেখছিলাম হারিয়ে যাওয়া শৈশব আর কৈশোর।
আমাদের সন্তানদের অনেককিছু আছে। অথচ মাঠ নেই, গাছ নেই, আকাশ নেই, আরও অনেককিছু নেই। তারা রাত জেগে
ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, আরও কী
কী করে, সকালে ঢুলতে ঢুলতে স্কুলে যায়, অথবা বাড়িতে থাকলে দশটা-বারটা পর্যন্ত ঘুমায়। সারা পৃথিবীতে ওদের বন্ধু ছড়িয়ে
থাকে, অথচ ওরা বড্ড একা।
আমার মেয়ে বই পড়তে ভালোবাসে, ভালোবাসে
কল্পনা করতে। বাস্তবে তা কোথায় গিয়ে ভাঙবে জানি না। জানি ধাক্কা খায়, সামলায় অনেকটাই নিজের মতো করে। অধিকাংশের মধ্যে কিন্তু এই কল্পনাও নেই। বাস্তব
পৃথিবী তাদের হিংস্র করে তুলছে। তারা সন্তুষ্ট নয় কিছুতেই, পেলেও আর
না পেলে তো বটেই।
স্কুল-কলেজে এই হিংসার চিত্র বাড়ছে। বিদেশে তো অল্পবয়সীরা
বন্দুক নিয়ে খুন করছে সহপাঠীদের। সেখানেও কিন্তু অদ্ভুত একটা ব্যাপার কাজ করছে।
ইদানীং ইয়ং অ্যাডাল্ট গোত্রের একধরণের ফিকশন খুব জনপ্রিয় হচ্ছে যেখানে অল্পবয়সী
ছেলেমেয়েরা হাতে নানারকম অস্ত্র নিয়ে খেলা করছে অথবা তথাকথিত দুষ্টের দমন।
তারসঙ্গে যৌনতাও আসছে অবাধে। এইসব গল্প থেকে পপুলার সিনেমা তৈরি হচ্ছে। আমাদের এখানে
যদিও গল্প বা সিনেমার থেকেও বাস্তব পাওয়ার ইচ্ছেটা কাজ করে অনেক বেশি। এরজন্যে
আমরা তো দায়ী বটেই। আমরাই তো স্কুলব্যাগ নিয়ে পিছনে ছুটেছি নিত্যদিন - স্কুল, সাঁতার, আঁকা, ক্যারাটে, গান -
বাপরে বাপ।
অথচ আমরা নিজেরা একদিন কাটা ঘুড়ির পিছনে ঢের বৃথা সময় নষ্ট
করেছি।
No comments:
Post a Comment