অধিকাংশের জীবনেই প্রথম শিক্ষক বাবা বা মা। আমারও হয়ত তাই।
কিন্তু বাবা বা মা আমায় পড়াচ্ছে এমন কোনো স্মৃতিই আমার নেই। ছোটবেলায় আমাকে কেউ
পড়াচ্ছে এটা সবসময়েই একবছরের বড় দাদার কথাই মনে করিয়ে দেয়। মানে ও যখন 'ড়ড়াই' আর আমি 'ললাই' বলি সেই
বয়স থেকেই আমাকে শেখাতে এবং ভুল সংশোধন করতে ব্যস্ত থাকত নিয়মিত। আমার এখন তো মনে
হয় নিশ্চয় অ আ ক খ শিখেই আমাকে শেখাতে বসেছিল। সেটা মনে নেই অবশ্য। তবে ক্লাস
টুয়েলভ পর্যন্ত সায়েন্স ওর কাছেই পড়েছি।
মনে আছে ও বাবার কাছে অন্য ছাত্রদের সঙ্গে
বসে পড়ত। আর সেভেন-এইটে পড়তে দেওয়ালে রবার ছুঁড়ে ছুঁড়ে খেলত আর মা পরীক্ষার আগে
পেছন থেকে সংস্কৃত পড়াত। আমাকেও পড়িয়েছে তো বটেই। কিন্তু আমার স্মৃতি জুড়ে শুধুই
দাদার পড়ানো আর পড়া না পারলে মাথায় চাঁটি। ও যদি দুটো-তিনটে স্টেপ জাম্প করে অঙ্ক
করায় তাহলে অঙ্কে নিতান্ত কাঁচা আমিই বা কী করি। রোজ একবার করে ঘোষণা করত, আর তোকে পড়াবই না। আবার পরেরদিন হাঁক পাড়ত, অঙ্ক বই
খাতা নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। গ্রাজুয়েশনে জুওলজি নিয়ে আমার সবচেয়ে আনন্দ হল আর দাদার
কাছে অঙ্ক করতে অথবা চাঁটি খেতে হবে না।
তবে শুধুই চাঁটিই তো আর নয়। ভীষণ নার্ভাস আমি মাধ্যমিকের
অঙ্ক পরীক্ষার দিন কেঁদেকেটে বমি করে একশা। পরেরদিন ফিজিকাল সায়েন্স পরীক্ষা, অথচ বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা নেই। দাদা পাশে বসে সবটা পড়ে বুঝিয়ে তৈরি করে দিল, পরেরদিন পরীক্ষা দিয়ে এলাম। মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে, দাদাকেই জানতে যেতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময়েও হস্টেল থেকে চলে আসতে
হয়েছিল, রেজাল্ট দেখতেও ওই গিয়েছিল।
আমার স্মৃতিতে তাই দাদা-ই আমার প্রথম শিক্ষক।
No comments:
Post a Comment