আজ সকালে রবিবাবুর গান শুনলাম বিচিত্র গলায়, বিচিত্র সুরে কিম্বা অসুরেও বলা যায়। তাই তাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত বলা যাবে না
অন্ততঃ আমার বিচারে। অনেককাল আগে রবিবাবু যখন ঠিক রবি ঠাকুর হয়ে ওঠেননি, তাঁর গান নানারকমভাবে গাওয়া হত। কিন্তু সেসব সামান্য যা শুনেছি তা গান বলেই
বিবেচ্য। আর এখন তাঁর গান নিয়ে যা হচ্ছে তা বাংলা গানের ব্যর্থতার আরেকটা দিগন্ত
বলা যায়। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বহু আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাত গিয়েছিল
দেবব্রত বিশ্বাসের। অথচ সেই কাজ একমাত্র তাঁরই সাজে। এবং তার সবকটিই সার্থক
রবীন্দ্রসঙ্গীত। দেবব্রত যখন বলেন, ভেঙ্গেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময় -
তখন দিব্য সেই জ্যোতির্ময়কে দেখা যায়, অনুভব তো করাই যায়। দেবব্রত যখন
গেয়ে ওঠেন, আকাশ ভরা সূর্য তারা তখন মনের আকাশে সূর্য-তারা সব
টপাটপ জ্বলে ওঠে। দেবব্রত যখন ডাক দেন, শুধু তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু হে
প্রিয়, মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও, তখন সে বন্ধুর সাধ্য কী, সব বক্তৃতা ফেলে তাড়াতাড়ি হাজির হয়
প্রাণের মাঝে। অথচ এমন দেবব্রতকে 'ব্রাত্য' করা
হয়েছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতের দুনিয়ায়। আর আজ যারা রবিবাবুর গান নিয়ে ইয়ার্কি মারছে, নিজেদের লেখবার মত কলমের জোর নেই, গাইবার মত গলায় সুর নেই আর
রবীন্দ্রসঙ্গীত বোঝার অনুভব শক্তি নেই তাদেরকে কী বলা যায় ভেবে পাই না, অথচ সর্বত্র তারা বেজেই যাচ্ছে, বেজেই যাচ্ছে। বাঙালির তালবোধ
কোনোকালেই নেই, সুরটাও যাচ্ছে এবারে।
ছোটবেলায় প্রতিদিন আমরা গল্পের বই পড়ার মত গীতবিতান পড়েছি।
অধিকাংশ গানই মুখস্থ ছিল, অনেকগুলো কন্ঠস্থও। আমি তো বাথরুম
সিঙ্গার। কিন্তু যারা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে চায় তাদের উচিত আগে কথাগুলো হৃদয়ে
উপলব্ধি করা, সুরকে মরমে পৌঁছানো। আগে তো দেবব্রতর পায়ের নখের
যুগ্যি হতে হবে, তারপরে এক্সপেরিমেন্ট। ভীষ্মলোচন শর্ম্মাদের জ্বালায়
বেচারা রবি শর্ম্মার অবস্থা একেবারে যাচ্ছেতাই।
সত্য সেলুকাস...
No comments:
Post a Comment