আজকাল লেখালেখি করে সম্মান
অথবা অর্থ পেতে গেলে দু'তিন রকমের নিয়ম নিষ্ঠাভরে মেনে চলতে হয়।
হয় বাজারি হতে হবে, নয় বুদ্ধিজীবী হতে হবে, নাহলে অন্ততঃ বুদ্ধিজীবী বা রাজনৈতিক ধামাধরা হতে হবে। নাহলে ভালো লিখলেও
প্রকাশকেরা পুছবে না। তাঁরা দৌড়াবেন তুলনায় নিম্নমানের বাজারি লেখার দিকে অথবা
প্রচারের আলোকে থাকা বুদ্ধিজীবীদের দিকে। আমার সুচিত্রা ভট্টাচার্য কী তিলোত্তমা
মজুমদারের অধিকাংশ লেখাই খুব নিম্নমানের লাগে। কিন্তু এঁরাই জনপ্রিয়, যাকে বলে হটকেক। আমার মায়ের নাম পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষই জানেন না। অথচ
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকা এই তকমা পাওয়ার যোগ্যতা তাঁর কলমে আছে।
কিন্তু তিনি বাজারি লেখা লেখেন না। এ সি ঘরে বসে সাধারণ মানুষের জন্যে চোখের জল
দেখিয়ে লেখেননি, বরং যাঁদের কথা লিখেছেন তাঁদের সঙ্গে
সত্যিকারের মিশেছেন তাঁদের মুখে নিজের ভাগের ভাত তুলে দিয়েছেন। দেশ-বিদেশ ঘোরার মত
অর্থ তাঁর কোনোদিনই ছিল না। কোনোদিন কারোর ধামা ধরেননি। অতএব তিনি মারা গেলে কোথাও
এক কলমও লেখা হবে না, বাংলা সাহিত্যে গেল গেল রব উঠবে না।
তাই যখন কোনো প্রকাশক অথবা লেখক আমার মায়ের নাম আলপনা ঘোষ বলিনি কেন জিজ্ঞাসা করেন,
আমিই আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করি আপনি চেনেন নাকি তাকে? মানে তাঁর প্রকাশিত বইয়ের তালিকায় কিন্তু মায়ের বই থাকে না।
আমার মাকে নিয়ে আমি অন্ততঃ
খুবই গর্বিত। কারোর কাছেই কলম বেচেনি বলে। আর বাংলা সাহিত্যে বেঁচে থাকতে
সত্যিকারের সম্মান খুব কমই পেয়েছেন গুণীজনেরা। এ আর নতুন কথা কী। একমাত্র দেবেশ
মামা আর রুশতীদিকে দেখেছি মায়ের লেখার সত্যিকারের কদর করতে, আর কাউকে নাহ্।
No comments:
Post a Comment