বছরে একবার করে আমাকে ফিজিওথেরাপি করাতেই হয় নিজেকে সচল
রাখতে। কখনো পুরোনো মুখেদের সঙ্গে দেখা হয়, কখনোবা
নতুনদের সঙ্গে ভাব জমে ওঠে। আজ পিয়ালির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কোথায় যেন থাকে ভুলে
গেলাম, রোজ ট্রেনে করে উল্টোডাঙায় এসে সেখান থেকে লেকটাউন।
আমায় জিজ্ঞাসা করছিল, বাড়িতে জন্মাষ্টমী আছে কীনা। বললাম, জন্মাষ্টমী কেন, কোনো ঠাকুরই নেই আমাদের বাড়িতে। জিজ্ঞাসা করল, সত্যি? বললাম, একদম সত্যি। কোনো ঠাকুরে আমি
বিশ্বাস করিনা গো, মানুষকে ভালোবাসাই ঈশ্বর সাধনা। সারাজীবন ধরে সেইটাই
চেষ্টা করে যাচ্ছি। কতটা পেরেছি বা পারছি জানিনা। ও বলল, জানো, আমি যখন কোনো মন্দিরে যাই, তখন ঠাকুরের কাছে যা দিই, তার থেকে বেশি দিই বাইরে যারা ভিক্ষা চায় তাদের।
তারপর আমায় একটা ঘটনা বলল -
'রোজ
বিধাননগর স্টেশন দিয়ে আসি তো, দেখি একটা খুব ছোট্ট বাচ্চাকে
বসিয়ে রেখেছে সামনে একটা বাটি দিয়ে। বাচ্চাটার এখনো ভালো করে কথাও ফোটেনি, ভিক্ষা দাও বলতে পারেনা, আধো আধো স্বরে কী বলে। দূরে ওর
বাবা-মা দাঁড়িয়ে থাকে, আমি দেখেছি। ওর বাবা-মা-ই এটা ওকে দিয়ে করায়, ওর ভিক্ষার পয়সা নিশ্চয় নিয়েও নেয়। তাও আমি রোজ ওকে কিছু না কিছু দিই, যেদিন যা থাকে, এক টাকা-দু'টাকা। যেদিন একটু বেশি থাকে আমার
কাছে সেদিন দশ টাকাও দিই। কিন্তু রোজ কিছু না কিছু দিই ওকে।'
পিয়ালির কতই বা বয়স হবে, মনে হয়
কুড়ির ঘরের প্রথম দিকে, বাড়ির আর্থিক অনটনের জন্যে হয়ত
কোনো কোর্স করে নিয়ে এই চাকরি করে, কতই বা রোজগার হবে, বাড়িতে এখন আরও তিনটে পেসেন্ট আছে বলল। আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই গল্প হয় ওর
সঙ্গে, ওদের সঙ্গে। আমার পিছনে লাগে ওরা নিয়মিতই। আমিও হাসি।
বলে সকলের সঙ্গে তো এরকম করা যায় না, কিন্তু তোমার সঙ্গে করা যায়। বলি, তা বেশ।
কাউকে ভিক্ষা দেওয়া উচিত কী অনুচিত এই নিয়ে আমি এখনো কোনো
সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। অধিকাংশ সময় দিইনা, মাঝে
মধ্যে দিয়ে ফেলি। আর মাঝে মাঝেই মনে হয়, নিজেই বেকার মানুষ, চাট্টি ভিক্ষা জুটলে ভালো হয়।
আসলে এইসব পিয়ালিদের দেখে আমি রোজ ভালো থাকতে শিখি, বাঁচতে শিখি নতুন করে।
আর কয়েকদিন আগে মেয়ের প্রজেক্টের জন্য চাইল্ড লেবার
সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখার পাতা ওল্টাচ্ছিলাম। দুধের শিশুর হাতে ভিক্ষাপাত্র কি
শিশুশ্রমের মধ্যে পড়ে? সেটাই ভাবছি শোনার পর থেকে।
No comments:
Post a Comment