কালকে কলামন্দিরের সামনেটায়
অনেকক্ষণ বসেছিলাম, বসে বসে দেখছিলাম। মানুষ দেখতে বড় ভালোে লাগে আমার। বড়
বিচিত্র জীব কী না। একটা বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির পত্রিকার তরফে অনুষ্ঠান ছিল। তাই
এথনিক শাড়ি-পাঞ্জাবীতে মাপমত সজ্জিত মানুষজন জমছিল একটু একটু করে। ওরই মাঝে বেমানান
আমি চান করিনি, চুল আঁচড়াইনি গোছের (আক্ষরিক অর্থে, মানে সকালে
বেরিয়েছিলাম, আবার জামা ছাড়তে হবে সেই আলসেমীতে সত্যিই স্নান করিনি।
তারপর সেই জামা পরেই এক ঘুম দিয়ে উঠে কোনোমতে চুলে একটা গার্ডার আটকে), কোঁচকানো
জামা আর ঢলঢলে পালাজো পরে। আসলে এটাতে আমার সবচেয়ে আরাম লাগে।
চোখে পড়ল চেনা-অচেনা
বুদ্ধিজীবীদেরও। মায়ের সুবাদে এদের অনেকেই আমার আপাত পরিচিত। যদিও আমি দূরত্ব বজায়
রাখতে মানে দূর থেকে বন্ধ টিভির মতোই দেখতে পছন্দ করি। কাছে গেলে সবই তো সেই বাংলা
সিরিয়াল। আমার আজকাল এই বুদ্ধিজীবী ক্লাসটাকে ভীষণ ঘৃণাও লাগে আবার করুণাও। মাঝে
মাঝে মনে হয় সারাক্ষণ মেপে মেপে চলতে চলতে কখনো ওদের হাঁপ ধরেনা? কখনো ভীষণ
ওই সাজানো মুখোশটা খুলে ফেলে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে উঠতে ইচ্ছে করে না? কী করে
মানুষ সারাক্ষণ মাপমতো হাসে, কথা বলে,
গোঁফ-দাড়ি কাটে অথবা রাখে, হাঁটে, ওঠে-বসে? কী করে
কখনো তরাজু কাঁপে না ওদের? কী ভয়ানক জীবন! নিশ্চয় ভালোবাসে অথবা রাগও করে মেপে
মেপে। মেপে ঘুমায়, মেপে জাগে। উফফ...ভাবতেই কী ভীষণ খারাপ লাগে আমার। এরা
কক্ষণো সক্কাল বেলা আমার আজ কাউকে ভালোলাগছে না, কিচ্ছু ভালোলাগছে না বলে
বেরিয়ে পড়তে পারবে না। এরা জীবনে কোনোদিন হারা উদ্দেশ্যে হাঁটতে পারবে না কারোর
জন্যই। সারাক্ষণ ঈশ্বরের মতো সর্বশক্তিমানের অভিনয় করে যেতে হবে। একটাই জীবনে
এভাবে বেঁচে থাকা...!!
আজকের সবথেকে সন্দেহজনক, সবথেকে
সুবিধাবাদী ক্লাস কিন্তু এরাই। ঈশ্বরের বরপুত্রের মতো ভক্তেরা ঘিরে থাকে এদের। কথা
অমৃতসমান। দেখলেই কেবল বিরিঞ্চিবাবার কথা মনে পড়ে যায় আমার। সূর্য-চন্দ্রেরা আজকাল
এদের আদেশেই চলছে কী না। যত ভালো লেখাই লিখুন, ভালোলাগে না পড়তে, মনে হয়
সেসবও নিজের একটা বিজ্ঞাপনী প্রচার মাত্র।
নাহ্, মা ঠিকই
বলেছে, বুদ্ধিজীবীরাই আমাকে সুপারি দেবে।
No comments:
Post a Comment