মেয়ে
বায়না ধরেছে মনের মানুষ চাই তার। মাটি ছেনে ছেনে শিল্পী তাকে গড়তে বসল।
হাত-পা-মাথা-শরীর কেমন দিব্যি সুন্দর হয়। কেবল বাকি থাকে চক্ষুদুটি। চোখেই তো
মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা। চক্ষুদুটি বাঙময় হলে ফুটে ওঠে মূর্তির ভাব, তার মনের
ভাষা। মূর্তির শরীরে রঙের পোঁচ পড়ে, রঙ শুকিয়ে গেলে মেয়ের পছন্দের রঙিন কাপড় যত্ন
করে পরিয়ে দেয় শিল্পী।
সব শেষ
হলে মেয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘আর চোখ দুটি? তা করবে না?’ শিল্পী বলে, ‘তোমার মনের মানুষের চোখ আমি
কী করে আঁকি বলতো? সে তো তাহলে আমার মনের মতন হবে। তোমার মনের মতন তো আমি বানাতে
পারব না।’ মেয়ে অবাক হয়ে বলে, ‘বা রে, তা কী হয়, আমি তো
তোমার মতো আঁকতে পারব না, ট্যাঁরা হবে না ব্যাঁকা হবে, কে জানে!’ শিল্পী বলে, ‘তা যাই হোক, তাতেই সে তোমার
মনের মানুষ তো হবে।’ মেয়ে রাগ করে বলে, ‘বিচ্ছিরি হলে আমি কিছুতেই সইতে পারব না।’ শিল্পী শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘বেশ, আমার মনের মতন করে এঁকে দিচ্ছি, তখন যেন বোলো না যে
সুন্দর হয়নি।’
শিল্পী
তো তার সব মনপ্রাণ দিয়ে মূর্তির চোখ আঁকল খুব ধৈর্য ধরে, যত্ন করে। শেষ হলে মেয়ে
বহুক্ষণ দেখলে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, এপাশ থেকে, ওপাশ থেকে। শিল্পী জানতে চাইল, ‘কোনোখানটা হয়নি বল, মুছে ঠিক
করে দিই।’ মেয়ে বলল, ‘হয়েছে, সবটুকুই হয়েছে, এর চাইতে ভালো আর কিছুতেই হতো না।’ বলে চুপ করে রইল। শিল্পী
বলল, ‘তবে, পছন্দ হয়নি?’ মেয়ে মাথা নেড়ে বলল, ‘খুব পছন্দ হয়েছে, কেবল...’। শিল্পী বলল, ‘কেবল কী?’ মেয়ে বলল, ‘কেবল আমার মনের মানুষটি
হয়নি।’
No comments:
Post a Comment