তোমায়
ভুলতে দিতে নাইকো আমার ভয়... – গান-কবিতার ঘোরে শব্দটা
মাথার মধ্যে ফিরে ফিরে আসে বৃষ্টিপাতের মতো, রবি ঠাকুরের গানের মতো, তোমার মতোই
ফিরে ফিরে আসে। বহুকাল আগে বিদ্যাপতি গান বেঁধেছিলেন, মাধব বহুত মিনতি করি তোয়...,
রবি ঠাকুর সেই সুর মাথায় রেখে ভানুসিংহের পদাবলীতে গাইলেন, তুঁহু নহি বিসরবি, তুঁহু
নহি ছোড়বি...। ঈশ্বর আর প্রেমিক মিলে গেলেন হৃদয়ে।
অথচ তুমি
চিরকাল দাঁড়িয়ে থাকলে আমার গানের ওপারে। আর আমি ইহজীবনে শুধু ডাক দিয়েই গেলাম, বাহির
হয়ে এস তুমি যে আছ অন্তরে...
কোনও
কোনও পাঠক বা শ্রোতা প্রশ্ন করেন, জানতে চান, কে তুমি? নিজের গভীরে ডুবে উত্তর
খুঁজে পাই না। কলম হাতে লিখতে বসে হয়ত এমন প্রশ্নের সম্মুখীন সকলেই হয়েছেন। অন্যের
কাছে অথবা নিজের কাছেই – কে তুমি আমারে ডাক, অলখে লুকায়ে থাক, ফিরে ফিরে চাই,
দেখিতে না পাই...।
শহীদ
কাদরির কবিতায় সুর বসিয়ে সুমন একদিন গেয়ে উঠেছিলেন, তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা...সেই
সুর মাথার মধ্যে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হতে হতে আমরাও যেন মাথা নত করেছি সেই প্রিয়তমার
সম্মুখে, বলতে চেয়েছি, ভয় নেই, এমন দিন এনে দেব, বোমারু জঙ্গি যত বিমানের ঝাঁক
থেকে বোমা নয় গুলি নয়...নাহ্, মুখ ফুটে বলতে পারিনি কোনদিনও।
রবি
ঠাকুর একবার বলছেন, চিরবন্ধু, চিরনির্ভর, চিরশান্তি তুমি হে প্রভু..., আবার পর
মুহূর্তেই দাবি করে বসছেন, তাই তোমার আনন্দ আমার পর তুমি তাই এসেছ নীচে, আমায় নইলে
ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হত যে মিছে...।
আর তাই
সারাজীবন সেই তোমাকেই খুঁজে ফিরেছি – তোমায় আমায় মিলন হবে বলে আলোয় আকাশ ভরা, তোমায়
আমায় মিলন হবে বলে ফুল্ল শ্যামল ধরা...। এই ফুল্ল শ্যামল ধরাতেই তোমাকে খুঁজে
ফিরেছি আলোয় ভরা আকাশের নীচে, পার্থিবে অপার্থিব তোমায়। আমি খুঁজতেই থাকি আমার
কলমে, বইয়ের পাতায়, চেনা অচেনা মানুষের মাঝে, সেই তোমায়।
No comments:
Post a Comment