Sunday, May 1, 2016

থাকে শুধু মুখোমুখি বসিবার...

রোজ তার সঙ্গে কথা বলি, কথোপকথনই বলা যায়। দিনরাত্তির। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে চলে যাই প্রতি মুহূর্তে। আজ, আগামীকাল, এই সময় অথবা ভালোবাসা, খুব গরম, ব্যথা করছে অথবা আরও যে কোনও কিছুই। অধিকাংশ সময়েই মতে মেলে না, বিস্তর কথা কাটাকাটি চলে। একেকদিন আবার দিব্য ভাব। যখন পুরোনো দিনের গল্প করতে করতে আমরা হস্টেলে বসে অমলেটের গন্ধ পাই অথবা জন্মদিনে মায়ের হাতের পায়েসের। মে দিন কী রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে গাওয়া গানের কথা মনে পড়ে যায়। একসঙ্গে গলা মেলাই যখন আনমনে তখনও। অথবা ফ্রিজ থেকে খানিকটা দুধ, কী আধভাঙা একটা সন্দেশ মুখে পুড়ে দিই তখনও আমরা হয়ত একমত। হয়ত কথাটা বলা এইজন্যই যে সন্দেশের ক্ষেত্রে একটা দ্বন্দের অবকাশ থাকে বৈকি। একমাত্র কাজ করার সময় টের পাইনা সে কী করে। বোধহয় কাজ। কবিতা লেখার সময় আমার আগে আগে ফস ফস করে শব্দগুলো বলতে থাকে। যত বলি, দাঁড়া একটু ভাবছি...।

একেকদিন শরীরটা বেশ ভালো ঠেকে। বলি এই দ্যাখ কেমন আজকে তোর বলার আগেই কত কিছু করে ফেললাম। ভারী খুশি হয় সে। একদম অমলিন খুশি। তবে শরীর ভালো থাকলে তার দেখা কম পাওয়া যায়। আজকাল একটু কিছুক্ষণ কাজ করলেই খুব কষ্ট হয়। একেকদিন মাথা ঘোরে, একেকদিন অন্যকিছু। রাস্তায় আসতে আসতে বলি, দূর ভাবতে পারিস, বছর দুয়েক আগেও আমি...। অম্লানবদনে বলে, কী মুশকিল, এখনও তো পারছিস, এখনও। স্রেফ এইটা মনে রাখ। আগের দিনগুলো নেই, কেটে গেছে। একেকসময় কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করেনা, ঝিমোতে থাকি, আমায় নাড়া দিয়ে বলে, লেখ, বলি, না। ফের নাড়া দিয়ে বলে, তাহলে একটু হা-পা নাড়া, ব্যায়াম কর, তাও বলি না। শেষে রেগে গিয়ে বলে, দূর ঘুমা তাহলে, আমি চললাম। কী আর করি ঢুলতে ঢুলতে কিছু একটা করতে শুরু করে দিই, যতক্ষন না পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়ছি। ঘুম ভেঙে দেখি হাত আড়ষ্ট, গায়ে ব্যথা। বলি, নড়তে পারছিনা। বলে, আরে ওঠ, ওঠ নড়তে পারছিনা বললে হবে? তোর এই ওজন নাড়াবে কে? ব্যাজার মুখে উঠি। ছুটির দিন হলে ঝগড়া করে শুয়ে থাকি, চিৎকার করে বলি, উঠব না উঠব না, বিচ্ছিরি পৃথিবীটা। সে বলে, পৃথিবীর তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে বিচ্ছিরি হবে, আসলে তোর না ওঠার ফন্দি। যতই বলি, চুপ। মুখের ওপর হাসে। এই হাসাটাই ওর বড় বাজে স্বভাব ছোট থেকে। অনেকবার বলেছি হাসিস না, একদম বাজে স্বভাব তোর। তবু শেষপর্যন্ত সবেতেই হাসবে। এবং আমাকেও হাসাবে।

অল্পবয়সে যখন আমার কোনও বন্ধু ছিল না, তখন একবার চিঠি লিখেছিলাম ওকে। এখনও লিখি মনে মনে, রোজ।

খুব একা লাগলে, ডাকি, ডেকেই যাই, আয়, আয়, আয়...
ব্যস, আর কোনও সাড়া নেই।
মনের মধ্যে কেবল সেই ডাক একটা কক্ষ থেকে আরেকটা কক্ষে ধাক্কা খেতে খেতে ফিরে আসে।


আর এই আমিটা চুপ করে অপেক্ষা করে থাকি, কখন আবার সেই আমিটা ফিরে আসবে...।

No comments:

Post a Comment