কাঙাল
হরিনাথের কথা আগেও পড়েছি। কিন্তু সাংবাদিকতার জগতে তাঁর এই লড়াইয়ের ইতিহাস আমার
সেভাবে জানা ছিল না। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এখনও আঞ্চলিক নানা পত্রিকা বেরোয়। কিন্তু
সেইসব পত্রিকায় সাহিত্যের নানা দিক যেভাবে ধরা পড়ে সেভাবে পড়ে না সমাজের অন্ধকার
দিকগুলো। কিছু কিছু কাগজ বা পত্রিকা হয়ত তাদের সামান্য উদ্যোগে কিছুদিন কাজ করে,
তারপরে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ আর্থিক না রাজনৈতিক আমার জানা নেই।
আসলে এখন হরিনাথ জন্মালে কবেই তাঁর লাশশুদ্ধু গুম হয়ে যেত। কিন্তু সত্যিই কি
হরিনাথরা মরে, মরে যায়? তাহলে কেন একের পর এক নিষ্পাপ মানুষ হত হচ্ছেন ধর্মান্ধদের
হাতে। তাতেও কি বন্ধ করা যাচ্ছে প্রতিবাদের কন্ঠস্বর? হরিনাথেরা আসলে বারবার
জন্মান। বারবার নিহত হন। মানুষের জন্যই জন্ম নেন আর মানুষই তাকে হত্যা করে। কী
আশ্চর্য!
গ্রাম
এবং মফঃস্বলের চেহারা কিন্তু এত বছরেও কিচ্ছু বদলায়নি। হ্যাঁ, প্রোমোটারের হাতে
পরে বিস্তর ফ্ল্যাট গজিয়েছে। গজায়নি হাসপাতাল বা স্কুল। এই তো এতবছর পর রূপনারায়ণপুর
গেলাম। দেখলাম অর্ধেকটা পরিত্যক্ত অঞ্চলের মতো আর বাকি অর্ধেকটায় উন্নয়নের
ফ্ল্যাটবাড়ি। অথচ সেই ফ্ল্যাটেরই গায়ে আজও লেগে আছে বাউড়ি পাড়া। তাদের উন্নয়নের
ছোঁয়া লেগেছে শুধু পোশাকেই। এক বৌদি বললেন, ‘দেখ না, একটা অসুখবিসুখ হলে
হয় আসানসোল ছুটতে হবে নয় দুর্গাপুর। আমি তো ছেলেকে বলেছি, কোথথাও নিয়ে যাবিনা,
শেষে রাস্তায় মরি আর কী। বাড়িতেই ওই মুখে চাট্টি গঙ্গাজল দিয়ে দিবি ব্যস।’ এক দাদা বললেন, ‘কেবলস স্কুলের তো টিমটিমে
দশা, মাইনে পাই না মাসের পর মাস। যে সব বাইরের ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হয় তাদের
কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলছে কেবলস। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে মা ভবাণী। ওই তো একটামাত্র
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।’
সর্বত্র
এটাই সত্য। এরমধ্যে বেড়েছে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা। কয়েকদিন আগে রূপনারায়ণপুরে
ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে শুনে কী বিষম আশ্চর্য হয়েছি। আমি রাত নটা, সাড়ে নটার সময় লোয়ার
কেশিয়া থেকে একা সাইকেল চালিয়ে রূপনারায়ণপুর বাজারের কাছে বাড়িতে ফিরতাম। দু’বছরে একবার মাত্র একটা
স্কুটার যেতে যেতে বোধহয় গান গেয়েছিল। ওটা সাইকেলে কেউ হলেই নির্ঘাত আমার হাতে মার
খেত। স্কুটার তো হুস করে পালিয়ে গেল। কতদিন একা একা ধানক্ষেতে ঘুরে সূর্যাস্ত
দেখেছি। কখনও সঙ্গে দেবী বা লুসি থাকত। কখনও বিপদের কথা মনেই আসেনি। একদিন এক চাষা
শ্রেণীর লোক আমাকে সাবধান করেছিলেন, তো তাঁর ওপরেই রেগে উঠেছিলাম। আজ কেউ ওভাবে
ঘুরতে সাহসই পাবে না। সম্ভবও নয় আজকের পরিস্থিতিতে। তখনও ওই অঞ্চলে কয়লা মাফিয়া বা
ওই শ্রেণীর লোকজন ছিল। কিন্তু এরকম ঘটনা সেভাবে শুনিনি।
রূপনারায়ণপুরে
গিয়েই আরও মনে হচ্ছিল গ্রাম বা মফঃস্বলের অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে। কিন্তু কোনও
কন্ঠস্বর উঠছে না। কেন?
মানুষের
কলম এবং সাহসই কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছু পরিবর্তন আনতে পারে, সে যত ক্ষুদ্রই হোক না
কেন। আমার সে বিশ্বাস এখনও আছে।
No comments:
Post a Comment