বেলার
দিকটায় রোজ ঝিমুনি লাগে, একেকদিন চোখটা লেগেও যায়। হ্যাঁ, এইসময়ে ঘুম বলতে নেই,
ওটা চোখ লাগাই। না হলে বড্ড বিবেকে লাগে হুস হুস করে চলে যাওয়া সময়ের জন্য। পরে
চোখ খুলে বিরক্ত লাগলে নিজেকেই আশ্বাস দিই, ও রাতের ওষুধের যোগফল বলে। যদিও গরমের
বেলায় পর্দাটানা পাখা চলা ঘরে ঝিমুনি কারোর পক্ষেই খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। পাখার
আওয়াজই বেশ একটা ঘুম পাড়ানি গানের মতো।
যাইহোক,
আজকেও স্নান করে টিফিন খেয়ে বইয়ের সেকেন্ড প্রুফ দেখতে দেখতে কখন চোখ লেগে
গিয়েছিল। আর অমনি...নাহ্, রুমালটা ম্যাও করে ওঠেনি। করতেই পারত অবশ্য, যা গরম
পড়েছে...।
আর অমনি
স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। স্বপ্ন দেখার একটা বাজে রোগ আমার চিরকালের। ঘুমিয়ে, জেগে
সবরকম অবস্থাতেই আমি নানা ধরণের স্বপ্ন দেখি। মজার স্বপ্ন, ভয়ের স্বপ্ন, আতঙ্কের
স্বপ্ন, কোনও মানে হয় না স্বপ্ন, অন্যরকম দিনের স্বপ্ন ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝে মাঝে
ধারাবাহিক স্বপ্নও দেখেছি। ধারাবাহিক স্বপ্ন আবার দুধরণের হয় – একই সময়ে
বারবার ঘুম ভেঙে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে ঠিক আগের শেষ জায়গা থেকে শুরু করা, আর নয়তো
পরেরদিন ঘুমালে ঠিক শেষ অংশ থেকে আবার দেখা। ধারাবাহিক স্বপ্ন অধিকাংশই ভয়ের হয়।
আজকের স্বপ্নটা অবশ্য একেবারে আলাদা।
অনেকদিনধরে মাথায় একটা উপন্যাসের প্লট রয়েছে। কিন্তু আমার মানসিকতায় উপন্যাস লেখা খুব
শক্ত। আমি গল্পই লিখি খুব ছোট ছোট। ভ্রমণকাহিনি যা খানিক বড়। মানে বেড়ানোটা যদি বড়
হয়, তাকে তো আর ছোট করতে পারিনা। তাও কখনও করি অবশ্য, একেকটা জায়গা নিয়ে টুকরো
লেখা। নিজের লেখার ব্যাপারে ধৈর্য আর মনঃসংযোগ দুটোরই বড্ড অভাব আমার। গবেষণাটা
স্রেফ অন্যদের নিয়ে করেছি বলেই কিছুটা যাও লিখতে পেরেছি। আসলে ফিচার রাইটিংটাই
আমার ভালো আসে মানে এমন অর্থহীন গোছের টুকরো লেখা।
যেটা
বলছিলাম, অন্য অন্য লেখা লিখি, অন্যের লেখা এডিট করি, আর মনে মনে কোনও একদিন লিখব
বলে উপন্যাসটার টুকরো ভাবনা জড়ো করি, ওলটপালট করি, ভাবনায় বদল আনি। তো আজকের
স্বপ্নে দেখি সেই উপন্যাসটাই হাজির হয়েছে! সাধারণত যেটা হয়, স্বপ্নের দেখাটা
কিছুটা বাধ্যতামূলক। মানে ভালো না লাগলেও দেখতেই হবে যেভাবে হচ্ছে। কিছুতেই বদলানো
যাবেনা। অন্তত এযাবত আমার ধারণাটা তাই ছিল। আজ দেখলাম, স্বপ্নের ভেতরেও আমি আছি,
বাইরেও। আসলে কোনও বই পড়লে বা গল্প লিখলে কোনও না কোনও চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে
আমরা পড়ি বা লিখি। নিজের সঙ্গে সেই চরিত্রের কিছুটা বা একেবারে মিল না থাকলেও
কিছুক্ষনের জন্য যেন ওই চরিত্রে অভিনয় করতে থাকি। তাই স্বপ্নের গল্পটার ভেতরে আমার
একটা চরিত্র ছিল। আর বাইরেও আমার একটা চরিত্র ছিল। যেন স্বপ্নটাকে আমি ডিরেক্ট
করছিলাম। কোনও জায়গা পছন্দ না হলে বা কোনও অপ্রয়োজনীয় চরিত্র ঢুকে পড়লে সেই
জায়গাগুলো বাদ দিয়ে আবার নতুন করে দেখছিলাম। অর্থাৎ স্বপ্নটাকে আমি আমার ইচ্ছামতো
বানিয়ে তুলছিলাম কেটে, ছেঁটে, বদলিয়ে। মাঝে মাঝে থামার মতোই যেন ঘুমটা ভেঙে
যাচ্ছিল, আবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ে পরের অংশ দেখতে শুরু করছিলাম। অর্থাৎ
এটাও ধারাবাহিক ছিল।
ঘুমটা
যখন পুরোপুরি ভেঙে গেল তখন বুঝলাম, আসলে আমি স্বপ্নটা লিখছিলাম। লিখছিলাম,
মুছছিলাম, এডিট করছিলাম, বদলাচ্ছিলাম। কিন্তু আসলে আমি লিখছিলামই। তবে স্বপ্ন নিয়ে
এই লেখার পাঠকেরা ভাববেন না যে এরফলে আমার উপন্যাসটা বেশ কয়েক পাতা এগিয়ে গেল।
আসলে পুরোপুরি ঘুম ভাঙার পরই বিষয়বস্তুগুলো কেমন ভাসা ভাসা হয়ে গেল। যতো সময়
যাচ্ছে, ততোই আরও মুছে যাচ্ছে সেগুলো।
অতএব
বিস্তর লিখেও আমি আসলে যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেলাম।
No comments:
Post a Comment