ইংরেজিতে
কিশোর থুড়ি ইয়ং অ্যাডাল্ট সাহিত্যের রমরমাটা ইদানীংকালে হয়ত হ্যারি পটারকে কেন্দ্র
করেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেটার ফর্মটা আরও কম্প্যাক্ট হয়েছে, পরপর দুটো বই পড়ে
বেশ বুঝতে পারলাম। বইদুটোই আমাকে বেশ আচ্ছন্ন করেছে – নীল গেইমান-এর ‘গ্রেভইয়ার্ড বুক’ আর ক্রিস ওয়েস্টউডের ‘মিনিস্ট্রি অফ
প্যান্ডিমোনিয়াম’। সবচেয়ে আশ্চর্যের হচ্ছে ভাবনার বৈচিত্র্য। বেসিক থিম
মূলতঃ এক। খারাপ এবং ভালোর লড়াই এবং তাতে ভালোর আপাত জয়। কিন্তু পটভুমিকা এত
বিচিত্র এবং এতরকম তার অন্তরার্থ...। মহাকাশ থেকে কবরখানা সর্বত্রই যে অল্পবয়সী মন
ঘুরে বেড়াতে পারে, অর্থ খুঁজতে পারে জীবন এমন কী মৃত্যুরও সেইটা খুব মনে হয়। কিশোর
মনের চাহিদা এবং বিস্তৃতি উভয়ের জন্যই ভালো। আমারই এই বয়সে পড়ে আশ্চর্য সব অনুভূতি
হচ্ছে। বইগুলো ভাবায়।
বাংলা
কিশোর সাহিত্য কোনওদিনও এর ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি। হ্যারি পটারের সঙ্গে কেউ কেউ
অকারণেই সুকুমার রায়ের তুলনা করে বাংলা কিশোর সাহিত্যের পিঠ চাপড়ানোর চেষ্টা
করেছেন। তবুও একমাত্র সুকুমার রায়ই কিছু ইউনিক ভাবনা ভাবতে পেরেছেন। সারা বিশ্বের
কিশোর সাহিত্য যখন আলাদা একটা জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে তখন বাংলা কিশোর সাহিত্য মোটের
ওপর সেই থোড় বড়ি খাড়াতেই আটকে গেছে। এখানের কিশোর সাহিত্যের বেশ বড় অংশ জুড়েই থাকে
খুব কাঁচা গোয়েন্দা কাহিনি।
ইয়ং
অ্যাডাল্ট বইগুলোর কমন বিষয় হল, নায়ক এক বা একাধিক সাধারণ ছেলে বা মেয়ে। কিন্তু
তার মধ্যে কিছু অসামান্য ক্ষমতা আছে। তার জীবনে কিছু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আছে।
অনেকক্ষেত্রেই বাবা-মা দুজনেই বা কোনও একজন নেই। আর্থিক অবস্থাও খুব সাধারণ বা
খারাপ। কিন্তু এক বা একাধিক অসম্ভব ভালো বন্ধু আছে। এছাড়া ওই ভালো-মন্দের লড়াইয়ে
ভালোর জিত সে তো আছেই। এতদিন যেটা আপত্তিকর লাগত যে, বেশ কিছু বইতেই এই অল্পবয়সী
ছেলেমেয়েরাই হাতে আগ্নেয়াস্ত্র বা অন্য কোনও অস্ত্র নিয়ে লড়াই করছে এবং তাতে জিতেও
যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মাথায় ঢুকে যাওয়াটা মোটেই ভালো নয়। তার
ফল খুব খারাপই হয়। কিন্তু শেষ যে বইদুটোর কথা বললাম, বিশেষতঃ শেষটায় লেখক
দেখিয়েছেন যে মানুষের মন, ইচ্ছাশক্তি, ভালো ভাবনা খারাপকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
এটা যে কোনও অস্ত্রের থেকেও এর শক্তি অনেক
বড়। লুসি আর স্টিফেন হকিং-এর জর্জকে নিয়ে লেখা সিরিজটারও মূল বক্তব্য কিছুটা এটাই।
লেখকের এই আইডিয়াটা খুবই গ্রহণযোগ্য এবং আধুনিক প্রজন্মের কাছে ভীষণ জরুরি।
আসলে
বাংলা কিশোর সাহিত্যে কিশোর-কিশোরীদের হয় আমরা শিশু হিসেবে ভেবে নিই, অথবা বড় হওয়া
মানে ইদানীংকালে টিন এজ লাভ স্টোরির নায়ক-নায়িকা হতে পারে এই পর্যন্ত। কিন্তু সে
একটি মানুষ, এভাবে ভাবতে চাইনা। তাই গল্পের ফর্মে এবং পটভূমিতে বৈচিত্র্য আসে না।
তবে বিদেশি গল্পের নকল করতে গেলে আরও সর্বনাশ। যেমন এনিড ব্লাইটন-এর ফেমাস ফাইভের
অতি বাজে নকল পাণ্ডব গোয়েন্দা। যে ছেলেমেয়েরা একবার বিদেশি এইসব কাহিনির রসাস্বাদন
করেছে তার কাছে একেবারেই বোকার মতো ঠেকবে।
বাংলা
সাহিত্য যতই সমৃদ্ধ বলে অহংকার করি না কেন, বিস্তৃত প্লট, লেখার বৈচিত্র্য কোনওকিছুতেই
বিশ্ব সাহিত্যের কোনও ধারারই ধারে কাছে আসে না বলে আমার মনে হয়। তবে কতটুকুই বা
পড়েছি আমি। তবু তুলনা মনে এসেই যায়। প্রবন্ধ, কবিতা এবং ঘর-সমাজ বিষয়ক কিছু
গল্প-উপন্যাস ছাড়া। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্য।
ছোটবেলায়
মেয়ের হাতে বই তুলে দিতাম। এখন নতুন নতুন বইয়ের খোঁজ ওই আমায় দেয়। এই দুটো বই-ই ও
আমায় পড়িয়েছে। ওদের ভালোলাগছে এসব, এইটা জেনেও ভালোলাগে। এইসব বই ওরা আলোচনা করছে,
নিজেরাও ভাবছে। এটা পরোক্ষভাবে আগামীদিনে বাংলা কিশোরসাহিত্যকেও হয়ত পুষ্ট করবে।
আমাদের কম বয়সে কত কম পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এত ভার্সেটাইল লেখা কল্পনাশক্তিকেও রসদ
যোগায়।
No comments:
Post a Comment