দুপুরের এই গণগণে রোদ্দুরটার মধ্যে একটা হু হু মনখারাপ
লুকিয়ে থাকে। এই মনখারাপটা খুব চট করে টের পাওয়া যায় না শীতের বিকেলের মতো।
খানিকটা লু বা গরম ধুলো বয়ে যাওয়ার মতো লাগে ভেতরে ভেতরে। ছেলেবেলার এমনি গরমের
দুপুরে ঘুঘুর একটানা ডাক কিম্বা হঠাৎ করে কাকের আর্ত চিৎকার সেই অনুভূতিটাকে আরও
বিষন্নতার দিকে নিয়ে যেত।
এইরকম গরমের দুপুরে একা একা থাকলে কত মুহূর্ত, কত মুখ,
বইয়ের পাতার কত চরিত্র মনে ভিড় করে আসে। নিশ্চিন্দিপুরের গ্রামের বালক অপুর বাঁশের
কঞ্চি হাতে ঘুরে বেড়ানো কী দুর্গার ছেঁড়া আঁচলে কাঁচা আম কুড়িয়ে বাঁধার দৃশ্য
সত্যি বলে মনে হয়। বৃষ্টি পড়লে পুরোনো যে স্মৃতি যে মনকেমন ভেসে আসে সে আবার ভিজে
ভিজে। গরমের দুপুরের স্মৃতি কিছুটা রুক্ষ্ম, উদ্ভ্রান্ত।
সেই যে বুড়ো লোকটা আমাদের কাছ থেকে পুরোনো খবরের কাগজ কিনত,
অনেকদিন আসেনি এরমধ্যে, শুনলাম অসুখ করে দেশে গিয়ে মরে গেছে। এমনি কত রোদের দুপুরে
বারান্দার নীচ থেকে ওর চেনা গলার ডাক ভেসে আসত, ‘কাগজওলা...কাগজ...লোহা বেচবে...”। একদিন কী কারণে যেন এমন দুপুরে
লেকটাউনের একেবারে শেষের দিকে একটা চওড়া গলি দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম নির্জন
রাস্তায় ও হাঁকতে হাঁকতে যাচ্ছে মাঝে মাঝে ওপরের দিকে তাকাতে তাকাতে, কেউ যদি
ডাকে।
মাঝে একবার অনেকদিন আসেনি, ভাবছিলাম শরীর-টরির খারাপ হয়নি
তো? হঠাৎ করেই আবার হাজির। ভারী খুশি খুশি ভাব। জিজ্ঞাসা করে জানলাম, রাজস্থান
বেড়ানোর সখ ছিল অনেকদিনের। এদ্দিনে খানিক টাকা জমিয়ে আর ছেলের কাছ থেকে আরও কিছু
নিয়ে বেড়িয়ে এসেছেন রাজস্থান। বললাম, বেশ করেছেন, কিন্তু এরপরে আর কোথাও গেলে খবর
দিয়ে যাবেন।
নাহ্, এবারেও খবর না দিয়েই চলে গেল কোথাও।
এই দুপুর রোদ্দুরে দূর থেকে ‘কাগজ, কাগজওলা...’ ডাক ভেসে এলেই হয়তো কখনও মনে পড়বে ওকে।
খুব গরমের দুপুরের মনখারাপের কোনও এক স্মৃতি হয়ে...।
No comments:
Post a Comment