সংসারে
সবথেকে দরকারি মায়ের হাতের জাদু। যেটা ছোটবেলায় দেখে এসেছি। গল্পের বইটইতে থাকে যে
মায়েদের গয়না দিয়ে দিল আর তা বন্ধক দিয়ে সংসার চলছে এইসব। আমার মায়ের কোনও গয়না
ছিলনা, সত্যিই। ঠাকুমা যে বালাজোড়াটা দিয়েছিল তা ছোটপিসির বিয়ের সময়ে দিয়ে দেয়। আমার
বিয়ের আগে বাবা কোনওদিন মাকে গয়না গড়িয়ে দেয়নি। বিয়ের সময়ে কেনা হারটাও আমাকে দিয়ে
দিয়েছিল। সংসারের সব টাকাই চিরকাল বাবার কাছেই থাকত। আমাদের জন্য একটা পেন্সিল
কিনতে হলেও মাকে তার দাম চাইতে হত। অথচ এই মা-ই দিনরাত্তির একা হাতে ঘরের সব কাজ,
দুটো বাচ্চা সামলিয়ে, বাজার-হাট করে কেমন গড়িয়ে নিয়ে যেত সংসারটাকে। সারাবছরে
মায়ের হয়ত একটাই শাড়ি কেনা হত। হয়ত বলছি, কারণ স্মৃতিতে প্রায় নেই যে মায়ের শাড়ি
কেনা হচ্ছে। আমাদের বরাদ্দ ছিল বছরে দুটো জামা আর একটা জুতো। আমাকে বাবা আংটি কিনে
দিয়েছিল। সেই আংটিই আমি পড়তাম না বলে মা পড়ত। এই শাড়ি-গয়না না থাকার জন্য পিসীরা
উলটে মাকেই কত বাঁকা কথা শুনিয়েছে। এরপরেও ছোটবেলায় খাওয়াপরা নিয়ে কষ্ট হয়েছে কখনও
মনে হয়নি। মায়ের হাতে কাচা ফর্সা কাপড় আর যাই থাকুক তাই দিয়েই মায়ের হাতের চমৎকার
সব রান্না। ওরই মধ্যে নাড়ু-নিমকি, তালের বড়া, ক্ষিরের সিঙারা, মালপোয়া, আচার, জেলি
বানাচ্ছে। আসলে ওই যে মায়ের হাতের জাদুতেই সংসার চলে।
দিনদিন
জিনিসের যা দাম বাড়ছে, এতদিন সংসার করেও আমি তাল পাইনা। নিজে যখন হিমসিম খাই এখনও
ফোন করে মাকে বলি, তুমি কিকরে চালাও বলতো? মায়ের এই জাদুটা যদি জানতে পারতাম তো বড়
ভালো হত।
No comments:
Post a Comment