দূরে
কোথায় দূরে দূরে...
কোথায়
যেন বৃষ্টি পড়ছে কোথায়... কার জানলায়, কোন আলপথে বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি পড়ে...। ঠাণ্ডা হাওয়া এসে লন্ঠনের শিখাটাকে
নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে বারে বারে...। অন্যমনস্ক না ভাবনায় মাটির গন্ধ মিশে যাচ্ছে। ওই
জল বাড়ছে জল বাড়ছে জানলায় শিকে মুখ লাগিয়ে কেমন মুখ চোখ চুল ভিজছে, কপাল বেয়ে জল গড়িয়ে এল। ঠাণ্ডা লেগে যাবে - সেই এক বকুনি।
জানি সর্দি কাশি তারপর জ্বর। তাহোক ও লেগে থাকবেই। বৃষ্টি তো ওই আলপথ বেয়ে মেঘের
ডানায় মাথা রেখে কোথায় চলে যাবে, সেই তেপান্তরের
দেশে। ততোক্ষণ একটু ভিজে নিই আলগোছে। কাল স্নানের আগে বৃষ্টি এলে কিন্তু পুরো
চুপ্পুস। আজ শুধু একটু হাতটা বাড়াই। যাবার আগের শেষ ছোঁয়াটুকু। দেখে নিও আমার জ্বর
আসবে না,
আসবে না, আসবে না। সত্যি।
তারপর
যে আমাকে
বৃষ্টি দিয়েছিল, তার হাতে ছিল রঙিন লন্ঠন। সেইটা
দোলাতে দোলাতে যাচ্ছিল জঙ্গলের পথে। বৃষ্টির ভেতর দিয়ে লাল নীল আলো কেমন হীরের কুচির
মতো ঝরে ঝরে পড়ছিল।
তারপর
চুপ কথারা।
হয়তো
ট্রেনের
জানলায় মুখোমুখি বসে থাকে অনিশ্চিতেরা, নিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যেতে যেতে।
মাঝখানে
খোলা জানলা মেঘ রোদ্দুর, রাত দিন পেরিয়ে
যায় একলা একলা।
কে জানে
হয়তো বৃষ্টি পড়েছিল!
কবিতার
বৃষ্টিপত্র
সেইথেকে
বৃষ্টিরা আমার কবিতার ডায়েরিতে থাকে। যে ডায়েরির অনেক পাতা খালি। আর বাকিটা বৃষ্টি
দিয়ে ভরা।
আমি শব্দ
অক্ষর আর বর্ণমালা দিয়ে বৃষ্টির আঁকিবুকি কাটি। আর অমনি মেঘ জমে। জমতে জমতে
অন্ধকার।
অন্ধকারের
কথারা ঝরে ঝরে আমার পাতাগুলো টলমল করে।
ভালোবাসা
কবিতার
নাম কবিতা কেন ওকে প্রশ্ন করেছিলাম।
ওর নাম
হতেই পারত মনখারাপ কিম্বা এক পশলা বৃষ্টি। হতেই পারত ওর নাম শবনম কিম্বা
মেঘপাহাড়ি। ওর সব ভালো। কেবল ওই কবিতা নামটা একেবারে মানায় না। ওই আটপৌরে হলুদ
মাখা আঁচলের নামটা ওর জন্য নয়। ওর নাম হতেই পারত রূপকথা কিম্বা অন্য পৃথিবী।
ভোরবেলা,
আঁধার রাত যা কিছুই মানিয়ে যেত ওকেই।
তবু সোজা
টানটান বিশ্রীরকমের কবিতা হয়েই তাকিয়ে রইল আমার মুখের দিকে। আর তারপরেও ওকে ঠিক
আগের মতোই ভালোবাসতে ইচ্ছে করল।
আশ্চর্য!
ফিরে
ফিরে আসা স্বপ্ন
কোনও
কোনও দরজার ওপারে থাকে সবুজ মাঠ, কাঁচা মাটির
রাস্তা আর দূরে নদী, নদীর ওপারে
গাছের সারি। এমন অনেককিছুই যা তুমি যেতে যেতে বুনে নিতে পার।
কোনও
দরজার ওপারে আছে কংক্রিটের পথ, ধুলো, জমে থাকা উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর বিরক্তি। এও বুনে নেওয়া
সন্তর্পণে।
আর কোনও
কোনও দরজার ওপারে এর কোনটাই নেই। কেবল জমাট বাঁধা অন্ধকার।
এর
কোনওটা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার নাম এক জীবন।
আমি তো
দেখছি অনেক মানুষ ওই তৃতীয় দরজার দিকে পা বাড়াচ্ছে। প্রতিদিন একটু একটু করে মরে
যাচ্ছে মানুষ। বুলেটে নয়, ছুরিতে নয়, খিদেয় নয়। অন্যকে হত্যা করতে করতে নিজেকে মেরে ফেলছে।
আমি
দেখছি দরজার ওপারে অন্ধকার সেই স্বপ্নটা বার বার।
প্রিয়
কবি সিলভিয়া প্ল্যাথের অনুভূতিতে
যে কোনও
কিছুই লিখে ফেলা যায়, যে কোনও কিছুই।
যতক্ষণ শ্বাস নিতে পারছ, যতক্ষণ অনুভব
করতে পারছ তুচ্ছকে, যতক্ষণ বিস্মিত
হতে পারছ। একটা নিটোল বিস্ময় প্রথম দেখার মতো। সাদা ক্যানভাসে তুলির টান যে কোনও
কিছুই।
যতক্ষণ
ভালোবাসতে পারছ।
No comments:
Post a Comment