একজন মা তার সন্তানদের খুন করেছে এই পরিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ করে
‘মা’ শব্দটা মহান, মা কখনও খারাপ হয় না, মা খারাপ
হলে সেটা ব্যতিক্রম এমন নানা কিছু পড়ছিলাম। আমি নিজেও কারও সন্তান এবং কারোর মা।
ভেবে দেখলাম মায়ের ওপর এই মহান আখ্যাটা চাপিয়ে দেওয়া সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের
কৌশল মাত্র। একটা মেয়েকে মানুষ বলে গণ্য না করে ‘মা’ নামক
বিশেষ তকমাটি এঁটে দিয়ে তার আচার-আচরণকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার। এমন কী খুব
হাস্যকরভাবে মাকড়সার সন্তান জন্মের পর মাকে বাচ্চারা খেয়ে নেয় এই ভুল উদাহরণও
এসেছে। স্ত্রী মাকড়সা মিলনের পর জৈবিক নিয়মানুযায়ী পুরুষ মাকড়সাকে খেয়ে ফেলে।
বায়োলজিতে আমাদের একটা চাপ্টার পড়তে হয়েছিল, ‘পেরেন্টাল কেয়ার’। অনেকদিন আগে তো তাই বিশেষ মনে
নেই। যতটা মনে আছে যে বিভিন্ন প্রাণীদের মধ্যে কোন কোন প্রজাতিতে এই ‘পেরেন্টাল কেয়ার’ দেখা যায় এবং তার নানা উদাহরণ।
যেমন, এক প্রজাতির মাছ আছে নামটা মনে নেই, যতদিন না বাচ্চা বড় হয় পুরুষ মাছটি তাদের
বহন করে বেড়ায় একেবারে আক্ষরিক অর্থেই।
যেমন অধিকাংশ প্রজাতির ক্ষেত্রে স্ত্রী প্রাণীটি বাচ্চাদের দেখভাল করে। এটা
সম্পূর্ণ একটা বায়োলজিকাল ইন্সটিংক্ট। এরমধ্যে কোন মহত্ত্ব নেই। মানুষের ক্ষেত্রেও
প্রাথমিকভাবে ওই বায়োলজিকাল ইন্সটিংক্ট কাজ করে সন্তানকে রক্ষার ক্ষেত্রে। এই
বায়োলজিকাল ইন্সটিংক্টের পিছনে রয়ে নিজের প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার স্বাভাবিক
প্রবৃত্তি। বরং মানুষ ভাবনাচিন্তা করতে পারে বলেই অনেকসময় বেসিক বায়োলজিকাল ইন্সটিংক্টের
বিরুদ্ধেও যায়। এটা নির্ভর করে মানুষটির প্রকৃতি এবং পরিবেশের ওপর।
‘মা’ একজন মানুষ। তিনি হোমো
স্যাপিয়েন্স প্রজাতির বায়োলজিকাল ইন্সটিংক্ট অনুযায়ী কাজ করেন। এরসঙ্গে পরিবেশ ও
পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবহার করেন। সব মানুষের মতোই তার মধ্যে ভালো এবং মন্দ আছে।
প্রত্যেক প্রাণীর মতোই বাবা-মায়ের জৈবিক ক্রিয়ায় সন্তানের জন্ম হয় এবং তাকে বাঁচিয়ে
রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের ওপরেই এসে পড়ে। কোন কোন প্রজাতির
ক্ষেত্রে দুজনের ওপরেই বা কোন একজনের ওপর। পুরোটাই জীববিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী। তাকে
মহৎ বা খারাপ আলাদা করে কোন তকমা দেওয়াই উচিত নয়।
মোদ্দা কথা ‘মা’ হয়েছি সেটাই অনেক, মহৎ হতে পারব
না বাপু। আর কিছু চাপিয়ো না। ভালোমন্দতে মানুষ হতে চাই আমরা সেইটি হতে দেবে না
কেউ। আশ্চর্য!
No comments:
Post a Comment