আমাদের কলেজের হস্টেলের দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠেই একটা ফোর সিটার রুম
ছিল। ঘরটা ভেতর দিকে, একটাই জানলা সেটা হস্টেলের ভেতর দিকে বারান্দামুখী।
ঘরটা বেশ অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে। এই ঘরটায় থাকার সময় প্রতিদিন ভোরবেলায় জ্বর
আসতো আমার। পাখার হাওয়ায় ভীষণ কষ্ট হত। সারাবছর কম্বল বা মোটা চাদর গায়ে দিয়ে
শুতাম তাও। সকালবেলায় ছোট বাচ্চার মতো চোখগুলো আটকে যেত, খুলতে হত
অনেক কষ্ট করে। এই ঘরে আমি বহুরাত জেগেছি। না, পড়াশোনা
নয়, অধিকাংশ সময়েই গল্পের বই পড়ে। ওই জানলাটার সামনেই আমার
খাটটা ছিল। রাতে ঘরে আলো জ্বালানো যেত না। জানলা দিয়ে করিডরের আলো আবছা বাঁকাভাবে
আমার খাটে এসে পড়ত। রাত জেগে বা খুব ভোরে উঠে অনেকে পড়ত, আর তাই
সারারাতই জ্বলত করিডরের আলোটা।
এই আবছা আলোয় গভীর নিঃশব্দ রাতে আমি কমলকুমার মজুমদারের 'গোলাপসুন্দরী' পড়ি। কমলকুমারের লেখায় যেটা আমাকে ভীষণ আচ্ছন্ন করে
তা হল মায়াময়তা। উপন্যাস শেষ হয়ে গেলেও বহু সময়, বহুদিন
মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে সেই অনুভব। উপন্যাসটা আমাকে নাড়া দিয়েছিল সেইসময়। পরপর
বেশকিছু কমলকুমার পড়ি এবং ওই অসামান্য গদ্য নিজের লেখায় আনার চেষ্টা করি। অল্পবয়সে
যেটা খুব স্বাভাবিক। বহুকাল আগেই সেই পর্ব চুকে গেছে অবশ্য।
কিছুদিন আগে বাংলা সাহিত্য আকাডেমিতে মায়ের একটা বক্তৃতা
ছিল কমলকুমারের ওপর। বিষয় - গোলাপসুন্দরী। নতুন করে না পড়লেও মাকে কিছু তথ্য
দেওয়ার উৎসাহে গোলাপসুন্দরী সম্পর্কীয় বেশ কিছু প্রবন্ধ পড়ে ফেললাম। অর্থাৎ আমার
জীবনে 'গোলাপসুন্দরীর দ্বিতীয় পর্ব এল।
কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই এই লেখাটা কলমে এল কবিতার মতোই নিজে
নিজে। যখন লিখছি তখন আমার একবর্ণও 'গোলাপসুন্দরী'-র কাহিনি মনে নেই। কিন্তু আছে ওই মায়াময়তার রেশ। মনে হল অন্য নাম দেওয়া উচিত
ছিল। কিন্তু পারলাম না। ওই নামটিই মাথার মধ্যে কেবল ঘুরে বেড়াতে লাগল। বাংলা সাধু
গদ্যে আগে কখনো লিখিনি, তাই কেমন হয়েছে নিয়ে বেশ উৎকন্ঠিতই
ছিলাম। কয়েকজন লেখক বন্ধু এবং সুস্মিতাকে পড়তে দিয়েছিলাম বেশ ভয়ে ভয়েই। সুস্মিতার
ভালোলেগেছিল জানিয়াছিল। তবে ঋতবাক-এ লেখাটি প্রকাশ করে আমাকে বেশ হতবাকই করে
দিয়েছে। ধন্যবাদ সুস্মিতা। এটা বোধহয় আমার গোলাপসুন্দরীর তৃতীয় পর্ব।
লেখাটা নিয়ে পরে আরো বিস্তৃত কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে মনে।
করতে পারলে সেটা হয়ত গোলাপসুন্দরীর চতুর্থ পর্ব হবে। তবে আপাতত এইটুকুই -
http://rritobak.blogspot.in/2015/08/blog-post_41.html
http://rritobak.blogspot.in/2015/08/blog-post_41.html
No comments:
Post a Comment