Saturday, August 15, 2015

স্বাধীনতা



স্বাধীনতা নিয়ে আমার কিছু ভাবনাচিন্তার কথা সকালে লিখতে বসেছিলাম। প্রিয় নোটবুকটা জবাব দিল। অতএব কিছুটা গেল হারিয়ে।

আসলে আমি অনেকদিন ধরেই স্বাধীনতা শব্দটার অর্থ খুঁজে বেড়াচ্ছি। খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছিনা। ছোটবেলায় বেশ লোমহর্ষক একটা অর্থ বলে মনে হত।



মনে আছে প্রাইমারি স্কুলের সামনের বারান্দায় আমাদের নিত্যকার প্রেয়ার হতো। সেখানে অন্যদিন কখনো আঙুল দিয়ে সামনের জনকে খোঁচানো, চোখ পিটপিট করা, ফিসফিস করা এগুলো কেউ না কেউ করলেও স্বাধীনতা বা ছাব্বিশে জানুয়ারির দিন সবাই খুব সিরিয়াস। ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ’ – এইসব গান সমস্বরে গাইতে গাইতে শুনতে শুনতে গায়ে কাঁটা দিত। ইতিহাসে চিরকালই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা আমার প্রিয় ছিল। মনে আছে, ক্লাস নাইনে, ব্রেস্ট টিউমার অপারেশনের পর তখনো ব্যান্ডেজ খোলেনি, বাড়িতে রেস্টে আছি, পনেরোই আগস্টের দিন স্কুল যাব বলে প্রচণ্ড বায়না করায় বাবা বাধ্য হয়ে নিয়ে গিয়েছিল কেবলসের স্কুলে। মার্চপাস্টে যোগ দিতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু বাবার সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম পুরো সময়টা। তবে আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে ঝলমলে পনেরোই আগস্ট ডি ভি গার্লসে পড়তে। বিরাট স্টেডিয়ামে চিত্তরঞ্জনের বিভিন্ন স্কুলের অজস্র ছেলেমেয়ে মিলে মার্চপাস্ট, অনুস্ঠান – সে এক হইহই রইরই কাণ্ড। সম্ভবত সেটাই আমার শেষ পনেরোই আগস্ট।

এখন আর স্বাধীনতার দিনে বীর বিপ্লবীদের কথা মনে পড়েনা। সেলুলার জেলেই কেউ জুতো খুলে ঢোকেনা। তার চেয়ে বড় কোনো মন্দির-মসজিদ ভারতবর্ষে আছে নাকি?

বিভূতিভূষণের লেখা মনে পড়ে। তিনি এমন সব মানুষের সঙ্গে মিশেছিলেন যারা ভারতবর্ষ দেশটার নাম জানেনা, জানেনা স্বাধীনতার অর্থ। আজো ভারতবর্ষের একটা বড় অংশের মানুষের কাছেই এই দুটো শব্দই অর্থহীন। আবার কিছু সুবিধাবাদী মানুষের কাছে বড় বেশি অর্থবহ।

আর ছাপোষা মানুষের কাছে বাড়তি একটা ছুটির দিন। বেলা করে ঘুম, বেড়ানো, এন্টারটেনমেন্ট।

আর প্রতিবছর পনেরোই আগস্ট এলে বহুদিন ধরে কাউকেই ভোট না দেওয়া আমি আরেকবার ভাবতে বসি ‘স্বাধীনতা’ শব্দের অর্থ। মানে ওই সময় নষ্ট আর কী।

No comments:

Post a Comment