জীবনে
আমার দুটি দুর্বলতা। এক লেখা আর দুই হিজিবিজি টিফিন বানানো। আমার মেয়েরও রকমারি
খাওয়ার ঝোঁক। বাড়িতে নানারকম টিফিন হয়, শঙ্করীদিও বানায়, আমিও। বাকি
দুজনের কেউ যদি অন্য কোথাও কিছু খেয়ে এসে বলে বেশ চমৎকার খেলাম। ব্যস, হয়ে গেল।
বীরেনদের
বাড়িতে চমৎকার চিলি বেবীকর্ন খেয়ে এসেছিল কদিন আগে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কী করে
বানায়?
বলল, আমি কী জানি, নেটে পেয়ে যাবে বলে ল্যাপটপে খুঁজে বের করে দেখাল।
সেই থেকে
তাল করছি। বিকেলে বেলের সরবত শেষ করার পর হাঁক পারলাম বেবীকর্নের রেসিপিটা বলতো, ফ্রিজ থেকে বের করে রেখেছি।
মেয়ে বলল, 'তুমি নিজেই তো দেখে নিতে পার।'
বললাম, আমিই যদি সব করব...
রেসিপি
বেরোলো। একবার চোখ বুলিয়েই বুঝেছি, বুঝেছি বলে রান্নাঘরে হাওয়া।
আসলে
রেসিপি ধরে রান্না করা আমার স্বভাব নয়, বেসিকটুকু পড়ে নিয়ে নিজের কল্পনা না মাখালে আর লেখক থুড়ি টিফিনকার কিসের? মানে ওই গল্পকারের কাছাকাছি আর কী।
কী
আশ্চর্য সেলারি নেই বলে সবুজ সবুজ বিনস দিতে যাইনি, পুড়িয়ে ফেলে ম্যানেজও করিনি...
একবারেই
পুরোপুরি সফল!
অন্তত
পাঠকেরা থুড়ি বাবা-মেয়ে-শঙ্করীদি তাই বলল। নিজের কথা নাহয় বাদই দিলাম।
আরে দূর
রেসিপি দিয়ে কী হবে? ও হয় সবাই জানে
নয় নেটে পাওয়া যাবে। বাকিটা মাথা ঘেঁটে।
মেয়েকে
বললাম,
এই রান্নার নাম কী বলতো?
- কী?
- 'আমার মা সব পারে।'
পুঃ
যাঁরা হাতে গরম রেসিপি চাইছেন -
আপনি তো
জানেন যে মেয়েকে পরীক্ষায় দিতে-নিতে আসার সময় টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে থেকে
বেবীকর্ন কিনেই ছিলেন। নাহয় কিছুটা খরচই হয়ে গেছে। আপনি তো আর এটা করবেন ভেবে
কেনেননি। আর আজকে বাজার আসামাত্র আপনার চোখে পড়েছে একটা বড়সড় ক্যাপসিকাম রয়েছে।
বেবীকর্ন তিন কী চার টুকরো করুন আর সেইমাপের আন্দাজে ক্যাপসিকাম সরু বা মোটা করে
কাটুন।
এরপর আর
কী আদা,রসুন, লঙ্কা, পেঁয়াজ কেটে নিয়ে লেগে পড়ুন। ওহো পেঁয়াজ কিন্তু রিঙপিস হবে, ওই আদা-রসুনের মতো কুচিয়ে ফেলবেন না। এইসব রেসিপিতে থাকবে
না। আরে না থাকলেই বা কী, আপনার মাথা বলে
তো কিছু থাকবেই।
এরপর
একটা পাত্রে জল ফুটে উঠলে গ্যাসটা অফ করে আধ মিনিট বেবীকর্নগুলো ভিজিয়ে তুলে
ঠান্ডা করে নিন।
তারপর
যেমন ধরুন এক জায়গায় লিখেছে ময়দা আর কর্নফ্লাওয়ারে শুকনো শুকনো মাখিয়ে তেলে ফেলুন
আর আরেক জায়গায় কিছুটা গোলা বানিয়ে। দেখুন জীবনে মঝ্যিম পন্থা হচ্ছে আদর্শ, সেই কবেই বুদ্ধদেব বলে গেছেন। অতএব বেবীকর্নটা শুকনো মেখে
জল ছিটিয়ে খানিক আঠা আঠা মতো করে নিন। আপনার শ্যাম ও কূল দুই-ই রইল। আর নিজের
কায়দার জন্য না বলা সত্ত্বেও ফ্রিজে যখন চালের গুঁড়ো আছে, দিয়ে দিন, আটকাচ্ছে কে? আরে আমি প্রথমে নুন দিতে ভুলেছিলাম বলে আপনিও যেন ভুলে
যাবেন না।
এবারে
একটু ডুবো তেলে বেবীকর্নগুলো বাদামী করে ভেজে তুলে রাখুন। কড়াই থেকে অতিরিক্ত তেল
বাটিতে ঢেলে রেখে অল্প তেলে আদা-রসুন কুচি, লঙ্কা, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম ভেজে নিয়ে টম্যাটো সস, সয়া সস, গোলমরিচ গুঁড়ো, নুন, মিস্টি দিন। ওর
মধ্যে বেবীকর্নের বড়াগুলো দিয়ে নাড়িয়েচাড়িয়ে ক্যাপসিকাম সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে
ফেলুন।
হয়ে গেল
আপনার চিলি বেবীকর্ন। হল তো?
No comments:
Post a Comment