সাহিত্য পরিষদ
লাইব্রেরীতে গেলেই যে ছবিটা চট করে চোখে পড়ে তা হল, অনেক মহিলা ও পুরুষ তাঁদের পেশা
হিসেবে অন্যের গবেষণার জন্য পাতার পর পাতা বই ও পুরোনো পত্র-পত্রিকা থেকে টুকছেন, তা বাংলা হোক বা ইংরেজি। এনারা সকলে পাতা পিছু
টাকা পান। আর গবেষকেরা ঘরে বসে নিশ্চিন্তে যা টুকে আনে ঠিক বা ভুল তাই দিয়ে গবেষণা
করে যান, বই প্রকাশ করেন। তাঁদের নামের জোরে সে সব উতরেও যায় পাঠকের কাছে। এই বই যায়
পরবর্তী গবেষকদের হাতে। অতএব বাঙালির গবেষণার হাল কোথায় পৌঁছাচ্ছে তা বেশ বোঝাই যায় (দীর্ঘশ্বাস ১)। গবেষকদের প্রশ্ন করলে
জবাব মেলে, অত সময় কোথায়? সত্যিই তো, চাকরি, গ্রান্ট, ডিগ্রী, খ্যাতি, গবেষণার সূত্রে বিদেশ ভ্রমণ - সব দিক সামলে চললে গরু খোঁজার সময় কোথায়
তাঁদের? কিন্তু যেনতেন প্রকারেণ গবেষণা করে যাওয়াটা জরুরি। নাহলে আবার অন্যদিকে টান পড়ে যে…।
আর এইভাবেই
গত বেশ কয়েক বছর ধরে হিড়িক পড়েছে বাংলা পুরোনো বইয়ের রিপ্রিন্টের। ভুলভাল টোকায় ভুলে ভরা রিপ্রিন্ট তো চলছিলই (দীর্ঘশ্বাস২)।
কিন্তু তারও সুবিধা হয়ে গেল। আন্তর্জালের নানা সাইটে আর ফেসবুকের বিভিন্ন বইয়ের গ্রুপে
এখন অনেকেই আন্তরিকভাবে ভালোবেসে বা পুরোনো বইগুলির
অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখার এবং নিয়মিত চর্চায় রাখার জন্য নিজেদের সংগ্রহ থেকেই হোক বা
অন্যের এবং সরকারিভাবেও বিভিন্ন বইয়ের পিডিএফ, ই-পাব আপলোড করছেন। কিছু প্রকাশক, কিছু
গবেষক এই সুযোগে হাতে গরম বই পেয়ে ডাউনলোড করে কোনমতে একটা ভূমিকা লাগিয়ে বিক্রি করছেন
(দীর্ঘশ্বাস ৩)।
বাংলা ভ্রমণ
কাহিনির রিপ্রিন্ট নিয়ে আমি কাজ করছি দীর্ঘদিন। তাতে যা বুঝেছি অধিকাংশ গবেষকই যাঁরা ভ্রমণকাহিনি নিয়ে গবেষণা করছেন বা বই রিপ্রিন্ট
করছেন, প্রায় সবাই বললেও বিশেষ অত্যুক্তি হবে না হয়তো, নিজে জীবনে ভ্রমণকাহিনি
লেখেননি। পড়েছেন নিতান্ত যেটুকু দরকার তার বাইরে একটিও না। অথচ মনে করেন যে সব
জানেন (দীর্ঘশ্বাস ৪)!
এই লেখায় আমার দুটি অনুরোধ – ১) জাতীয় গ্রন্থাগার এবং
সাহিত্য পরিষদের মতো লাইব্রেরীগুলি থেকে টাকা দিয়ে বই টোকানো অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।
২) পাঠককে বলি, পুরোনো বইয়ের রিপ্রিন্ট কেনার আগে ভেবে দেখেছেন কি বইটা কেন পড়বেন? কী তার ঐতিহাসিক
পটভূমিকা? বই কেনার আগে ভূমিকায় যদি এর উত্তর পান তবেই কিনবেন এটাই আমার পরামর্শ। নাহলে
ইন্টারনেটে খুঁজলে মূল বই বিনা পয়সাতেই পাবেন।
তবে কিনা
এ দুটোর কোনটাই হবে না আমি জানি। অতএব...(দীর্ঘশ্বাস ৫)।
No comments:
Post a Comment