খোলা
জঙ্গলে প্রথম জীব-জন্তু দেখি গরুমারায়, ডুয়ার্সে। মনে পড়ে ওয়াচটাওয়ার থেকে মানুষের সম্মিলিত চিৎকার - 'গণ্ডার গণ্ডার'। শুনতে শুনতে ভাবছিলাম ওই জন্তু-জানোয়ারেরা যদি কখনও মানুষ দেখতে আসে তবে
কেমন হয়?
কলকাতার কোনও ওয়াচটাওয়ার থেকে চিৎকার করবে তাদের নিজস্ব
ভাষায় - 'মানুষ, মানুষ'!
বেঙ্গালুরুর
বানারঘাট্টা ন্যাশনাল পার্ক এক অর্থে অনেকটাই চিড়িয়াখানা। নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে
জীবজন্তুদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত। তবে জু বলতে যা বুঝি, সেই অংশটা আবার আলাদা। এইদিকটায় খোলা জঙ্গলে সাফারি হয়।
ভাল্লুক,
হরিণরা মানুষের পক্ষে তুলনায় নিরাপদ বলে তাদের সামনে খাঁচার
আড়াল নেই। রাস্তার ধারেই তাদের খেতে দেওয়া হয়েছে যাতে দর্শকেরা দেখতে পায় সহজেই। এ
যেন রঙিন পোশাক আর সাজে খদ্দের ধরানোর চেষ্টা। আর অন্যদিকে বাঘ-সিংহেরা আমাদের
মতোই জালের আড়ালে। দর্শকদের আমোদের জন্য একেকটা বাঘকে একেকসময় খাঁচার বাইরে খোলা
জায়গায় খানিকক্ষণ ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাফারিতে
নিয়ে যাওয়া হয় জাল দেওয়া বাস বা জিপে। ভেতরে বসে থাকলে মনে হয় যেন আমরাই খাঁচার
ভেতরে,
আর ওরা বাইরে। মেয়েকে বলছিলাম, নিশ্চয় ওরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে, সেই দু'পেয়ে জন্তুগুলো
আবার এসেছে রে। কী অসভ্যের মতো চিৎকার করে আর কী সব আমাদের দিকে তাক করে! কই আমরা
তো ওদের বিরক্ত করিনা? ছেড়ে রাখা বাঘটা
আগেপিছে থাকা দুটো বাসের মাঝখানে পায়চারি করে দেখছিল আমাদের বেশ কিছুক্ষণ। শেষে
খানিক ধুত্তোর ভঙ্গীতে নেমে গেল পাশের রাস্তায়।
একবার
কাজিরাঙ্গা থেকে বেরিয়ে আসার সময় এক হরিণের চাহনি দেখে আমাদের মনে হয়েছিল, যেন এটাই ভাবছে যে কতক্ষণে এরা বেরিয়ে যাবে আর আমরা একটু
হাঁপ ছেড়ে বাঁচব।
খাঁচার
ভেতর থেকে ওদের দেখছিলাম। অথবা খাঁচার বাইরে থেকে ওরা আমাদের। ভাবছিলাম, ন্যাশনাল পার্ক বা অভয়ারণ্য এইসবও তো সেই নির্দিষ্ট সীমানার
মধ্যেই থাকা। আসলে সবই তো সেই মানুষের সৃষ্ট লক্ষণের গন্ডি - যাকে আমরা ওদের
স্বাধীনতা বলি।
আসলে
আমরা তো নিজেদেরও বেঁধেছি 'দেশ' নামক লক্ষণের গন্ডিতে। 'ধর্ম'
নামক অভয়ারণ্যে বাস করি আমরা। 'সমাজ' নামক ন্যাশনাল
পার্কে।
যেদিন
কারোরই কোনও ক্ষমতার সীমায়ণ ছিল না, আমরা স্বাধীন ছিলাম অন্যান্য জন্তুজানোয়ারদের মতোই। এখন আমরা দেশ ধর্ম সমাজের
জাল দেওয়া যে যার 'চিড়িয়াখানা'য় থাকি। সেখানে কে যে কাকে দেখে সেটাই ভাববার।
No comments:
Post a Comment