কাক
জিজ্ঞাসা করল, ‘কালোকে অর্ধেক করলে কী হয়?’
আমি বললাম,
‘কালোকে অর্ধেক করলে আর কী
হবে আধখানা কালো হবে!’
কাক মাথা
নেড়ে বলল, ‘হলো না, হলো না, সাদা।’
আমি
বললাম, ধুত, তাই আবার হয় নাকি? আমার কালো রঙ পেন্সিল ভেঙে গেলে তো সেটা কালোই
থাকে, দুটো অর্ধেক কালো।
‘পেন্সিল নয়, পেন্সিল নয় টাকা, কালো টাকা। তোমার কালো টাকা
আছে?’ কাক আবারও জিজ্ঞাসা করে।
আমি
বললাম, না, কালো রঙের টাকা হয় নাকি? আমার কাছে তো একটাও নেই! গোলাপী রঙের দুটো
দুহাজার টাকার নোট রয়েছে যেটা কোথাও ভাঙিয়ে দিচ্ছে না। খুচরো হবে নাকি?
কাক
বিরক্ত হয়ে একটানা বলে গেল, ‘কালো টাকা মানে ব্ল্যাক মানি তাও জানোনা?
খুচরো? খুচরো মোটেও এখন সহজ কথা নয়। দশ টাকার কয়েন চাও তো গোটাকতক দিতে পারি কেউ
নিচ্ছেনা। তোমার বয়স কত? ওজন? কালো টাকা নেই যদি তবে লাইনে দাঁড়াওনি যে বড়? তুমি
দেখেছ আম্বানী, জয়ললিতা, মোদী, মমতা কাউকে লাইনে দাঁড়াতে?’
মাথা
নেড়ে ভয়ে ভয়ে বললাম, কই না তো, দেখিনি। কোনও মিডিয়া খবর করেনি। বয়স? আমার বয়স তো
তেতাল্লিশ বছর আর ওজন সত্তর কেজি। কিন্তু আমি তো এ টি এম থেকে টাকা তুলতেই পারিনা।
কাক
হেঁকে বলল, ‘বয়স সত্তর কেজি, ওজন তেতাল্লিশ বছর, দিব্যি ফেসবুক-হোয়াটস
অ্যাপ করতে পার আর টাকা তুলতে পারনা? বললেই হল? তুমি তো আর গরীব নও যে ফস করে
পঞ্চাশ দিনের আগেই মরে যাবে! তাহলে হয় তুমি দেশদ্রোহী নাহলে সিপিএম।’
আমি ভীষণ
চটে গিয়ে বললাম, একদম বাজে কথা বলবে না। আমার বয়স মোটেও সত্তর কেজি নয়।
কাক
একটুও পাত্তা না দিয়ে পেন্সিলটা দুবার ঠক ঠক করে ঠুকে ঘাড় বেঁকিয়ে একটুক্ষণ কী
ভেবে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘পেটিএম জানো? ক্রেডিট কার্ড? ক্যাশলেস মানি?’
আমি এবার
ভারী খুশি হয়ে বললাম, পেটিএম তো? কেন জানব না? ওই যে মোদীর ছবি দিয়ে কাগজে কাগজে
বিজ্ঞাপন দিয়েছিল।
কাক বলল,
‘আরে বিজ্ঞাপন চাও বললেই হয়।
এই নাও’ বলে একতাড়া কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিল।
দেখি
কাগজের গায়ে বড় বড় করে লেখা - ‘শ্রী শ্রী ভুষুন্ডি কাগায় নম। সাউথ ব্লক, সেক্রেটারিয়েট
বিল্ডিং...
এখানে
হিসাবী বেহিসাবী সমস্ত কালো টাকা সাদা করিয়া থাকা হয়।
জমা টাকা
কালো তাহা নিজে জানাইলে কর ৩০% জরিমানা ১০% সারচার্জ করের ৩৩% অর্থাৎ সবমিলিয়ে হল
গিয়ে ৫০%। বাকি টাকা চারবছর গরিব কল্যাণ প্রকল্পে কাজে লাগবে।
জমা
দেওয়া টাকা কালো বলে ধরা পড়লে...ইত্যাদি ইত্যাদি।’
আমার তো
মাথাফাতা সব গুলিয়ে গেল।
বললাম,
আর যাদের টাকা কালো নয়, যারা টাকা তুলতে পারছে না, টাকা পেয়েও ভাঙাতে পারছে না,
যারা টাকা এখনও বদলাতে পারলনা...?
কাক ভারী
বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তাও জানোনা? এরা হল হিসেবের বাইরে, খরচের খাতায়। এদের জমা
টাকায় সরকারের স্বাচ্ছল্য বাড়ল, কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে ঋণ দেওয়ার মতো পুঁজি বাড়ল।’ সকাল থেকে বকবক করে দিলে তো
আমার সময় নষ্ট করে। এখন সময়ের দাম বড্ড বেড়ে গেছে -৫০ দিন, তিন মাস, ছমাস... কতটা
কালো টাকা সাদা হচ্ছে তার ওপর বদলে বদলে যাচ্ছে।
এই বলে কাক্কেশ্বর
মন দিয়ে আবার কালো-সাদা হিসেব কষতে লাগল আর আমি হাতে দুটো বাতিল থুড়ি না ভাঙাতে
পারা দুহাজার টাকার নোট নিয়ে আকাশপাতাল ভেবেই যেতে থাকলাম কোথায় ভাঙাব?
No comments:
Post a Comment