একটা সিনেমা দেখছিলাম। সেখানে নায়ক কিছুতেই একটা দিনকে পেরিয়ে পরেরদিনে যেতে পারছে না। সেই একইদিনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। প্রথমে সে ক্রমশ বিষণ্ণ হয়ে পড়ছিল। আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছুতেই তবু দিনটা পেরোতে পারছিল না। তারপরে সে সেই দিনটুকুতেই বাঁচতে শুরু করল। নানাকিছু নতুন জিনিস শিখল, মানুষকে ভালোবাসল এমন নানাকিছুর মধ্যে দিয়ে, আশার মধ্যে দিয়ে বাঁচতে শুরু করল। আর ঠিক তখন একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখল একটা নতুন দিন শুরু হয়েছে।
ডায়েরি লিখব ভেবেছিলাম। এইসময়ের। এই করোনাকালের। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় লেখা হল না। আজও ডায়েরি লিখতে বসিনি। লিখছিলাম বাঁচার কথা। এই যে দেশময় একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একেবারে সরকারিভাবেই। আর মানুষ সেই মরে যাওয়ার আতঙ্কে অন্য মানুষের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখছে, ভাবছিলাম তার থেকে বেঁচে ওঠার কথা। জোর করে এই লকডাউনে কী লাভ হচ্ছে? আরেকটু ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া। অথচ সেই সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট, সেই ঘটনাই ঘটতে চলেছে। আমাদের মধ্যে যাদের শরীরে যথেষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে তারাই বেঁচে থাকবে, হয়ত করোনা ভাইরাস শরীরে নিয়েই, আর যাদের সেই প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই তারা বাঁচবে না। তারমধ্যে আমিও থাকতে পারি। কিন্তু সেই মৃত্যুভয় নিয়ে আজকের দিনটা বাঁচব না কেন?
ভাবছিলাম বেঁচে ওঠার কথা। আসলে আমরা অনেকদিন হল মরে গেছি। এই একটা সুযোগ এসেছে বেঁচে ওঠার। পরেরদিনে এগিয়ে যাওয়ার।
এরই মাঝে মানুষে মানুষে ধর্মের নিরিখে ঘৃণার যে বীভৎস চিত্রটা গত কদিন দেখছি, শুনছি, পড়ছি তারপর মানুষ হিসেবে আদৌ আমরা বেঁচে আছি কিনা সেটাই সন্দেহ হচ্ছে। খুব উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একথা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে এদেশে করোনা ছড়াচ্ছে মুসলমানেরা। তারা করোনা ছড়িয়ে হিন্দুদের মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। কী আশ্চর্য যেন মুসলমানদের ইমিউনিটি ক্ষমতা এত বেশি যে ওদের কিছু হবে না। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জামাতের ঘটনা মিডিয়া হাইলাইট করছে। চেপে দেওয়া হচ্ছে হিন্দুদের নানা জনসভার কথা। নকল মুসলিম সেজে হিন্দু সেন্টিমেন্টে আঘাত করছে কিছু বিশেষ দলের লোকজন। আর মানুষ সেসবই বিশ্বাস করছে। আর ঘৃণা বাড়ছে, শুধুই ঘৃণা।
আমি তো কেবল জীবন্ত মানুষের লাশ দেখতে পাচ্ছি। মানুষ হিসেবে যারা মরে গিয়েছে অনেকদিন।
ভাবছিলাম বেঁচে ওঠার কথা। এর থেকে বেঁচে ওঠা।
বাঁচার যে অন্য মানেও হয়।
পরেরদিন দেখার জন্য।